ফিতরা দেওয়ার নিয়ম, ফিতরা কত টাকা ২০২৩? ফিতরা দেওয়ার নিয়ম বা ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে এ জাতীয় প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। এখন আরবি ১৪৪৪ হিজরী, রমজান মাস চলমান। আর আমরা জানি রমজান মাস শেষে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ উঠলে সারা বিশ্বের মুসলমান ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের ঈদুল ফিতর নামাজ আদায়ের পূর্বে ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। এই প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতরার যাকাত রোজা পালনকারীকে অনর্থক, অবঞ্চনীয় ও নির্লজ্জতামুলক কথাবার্তা বা কাজকর্মের মলিনতা থেকে পবিত্র করা এবং মিসকিনদের উত্তম খাদ্যের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে অত্যাবাসকীয় করেছেন ( সুনানু আবি দাউদ) নিচে ফিতরা কত টাকা ২০২৩ এবং ফিতরা দেওয়ার নিয়ম বিস্তারিত বিবারণ দেওয়া হল।
ফিতরা অর্থ কি | ফিতরা কত টাকা ২০২৩
সাদাকাতুল ফিতর শব্দের মধ্যে সদকা শব্দের অর্থ দান আর ফিতর শব্দের অর্থ ভঙ্গ করা। পরিভাষায় সাদকাতুল ফিতর বলতে বোঝায় রমজান শেষে ঈদ উদযাপনের দিন খাদ্য স্বরূপ নির্ধারিত সম্পদ প্রদান করা। ফিতরা মূলত ওয়াজিব করা হয়েছে রমজানের রোজা সংক্রান্ত বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুক্তিসমূহ হতে মুক্ত হওয়ার বিশেষ সুযোগ স্বরূপ। সাদকাতুল ফিতর মূলত ধনী, ছোট, বড়, স্বাধীন, ক্রীতদাস, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে। সাদাকাতুল ফিতরা ঈদুল ফিতর সালাতের পূর্বে আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের সালাতের পর ফিতরা প্রদান করলে তা সাধারণ সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।
ফিতরা কত টাকা ২০২৩ | সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ
সাদকাতুল ফিতর আটা, খুরমা, কিসমিস, পনির ইত্যাদি দিয়ে আদায় করা যায়। সাদকাতুল ফিতর ( আটা, খুরমা, কিসমিস, পনির ) কোন দ্রব্য দিয়ে অথবা কোন দ্রব্যের সমপরিমাণ মূল্য দিয়ে আদায় করতে হবে সেটি নির্ভর করে ব্যক্তির সামর্থের উপর। যাদের সামর্থ্য কম তারা আটা অথবা আটার সমপরিমাণ মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে পারে। এভাবে করে যাদের সামর্থ্য তুলনামূলকভাবে বেশি তারা খুরমা, কিসমিস অথবা পনির দিয়ে বা তার সমপরিমাণ মূল্য পরিশোধ করে ফিতরা আদায় করতে পারে।
এক্ষেত্রে যাদের সামর্থ্য কম তারা অর্ধ সা” পরিমাণ আটা বা তার সমপরিমাণ মূল্য পরিশোধ করে ফিতরা আদায় করতে পারে। এক্ষেত্রে ১ সা” সমান ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বিবেচনা করা হয়। এবং অর্ধ সা” সমান ১ কেজি ৬৫৯ গ্রাম বিবেচনা করা হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত ২০২৩ সালে ফিতরা কত তা নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করবে তারা অর্ধ সা” পরিমাণ আটা অর্থাৎ এক কেজি ৬০০ গ্রাম আটা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য (৭০ টাকা) পরিশোধ করে ফিতরা আদায় করবেন। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর তথ্য অনুযায়ী যারা খুরমা তথা খেজুর দিয়ে ফিতরা আদায় করবেন তারা ১ সা” পরিমাণ অর্থাৎ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম খেজুর এর মূল্য বর্তমান হিসাবে ১৯৮০ টাকা পরিশোধ করে ফিতরা আদায় করবেন।
এরপর যারা কিশমিশ এর হিসাবে ফিতরা আদায় করবেন তারা ১ সা” পরিমাণ অর্থাৎ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম কিশমিশ এর মূল্য বর্তমান হিসাবে ১৬৫০ টাকা পরিশোধ করে ফিতরা আদায় করবেন। এভাবে যারা পনির এর হিসাবে ফিতরা আদায় করবেন তারা ১ সা” পরিমাণ অর্থাৎ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম পনির এর মূল্য বর্তমান হিসাবে ২৬৪০ টাকা পরিশোধ করে ফিতরা আদায় করবেন।
পণ্যের নাম | ফিতরার পরিমাণ ২০২৩ ( পণ্যে | ফিতরার মূল্য ২০২৩ ( টাকায় ) |
গম ও আটা | আধা সা”- ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম | ১১৫ টাকা |
যব | এক সা”- ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম | ৩৯৬ টাকা |
খেজুর | এক সা”- ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম | ১৯৮০ টাকা |
কিশমিশ | এক সা”- ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম | ১,৬৫০ টাকা |
পনির | এক সা”- ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম | ২,৬৪০ টাকা |
ফিতরা দেওয়ার নিয়ম | ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে
ফিতরা দেওয়ার নিয়ম বা ফিতরা কত টাকা দিতে হবে তার উপরের নিবন্ধে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর তথ্য অনুযায়ী যদি কেউ আটা / গমের সমমূল্যে ফিতরা প্রদান করে তাহলে তাকে অর্ধ সা; পরিমাণ আটা অর্থাৎ এক কেজি ৬০০ গ্রাম আটা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য (১১৫ টাকা) পরিশোধ করে ফিতরা আদায় করতে হবে। এভাবে করে কেউ খেজুর দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তাকে ১ সা; পরিমাণ অর্থাৎ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম খেজুর এর মূল্য বর্তমান হিসাবে ১৯৮০ টাকা পরিশোধ করে ফিতরা আদায় করবেন। একইভাবে কেউ যদি কিসমিস এর হিসাবে ফিতরা আদায় করে তাহলে তাকে ১৬৫০টাকা হিসাবে ফিতরা আদায় করতে হবে। এছাড়াও যদি পনির এর মূল্যে কেউ ফিতরা আদায় করে তাহলে তাকে ২৬৪০ টাকা হিসাবে ফিতরা আদায় করতে হবে।
ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে | ফিতরা দেওয়ার নিয়ম
ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে এমন হিসাবে বলা হয়েছে যে, গরিব আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী ফকির মিসকিন কে সাদকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে একজনের ফিতরা একাধিক ব্যক্তিকে আবার একাধিক ব্যক্তির ফিতরা একজনকে দেওয়া যাবে। ফিতরা দেওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে যদি কোন শিশু ঈদুল ফিতরের সুবহে সাদিকের পূর্বেও জন্ম গ্রহণ করে তাহলে তার সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা সচ্ছল অভিভাবকের উপর ওয়াজিব। একইভাবে যদি কোন ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের দিন সুবেহ সাদিকের পূর্বে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হবে না।
আরো পড়ুন: রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি জানুন
যাদেরকে সাদাকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে না | ফিতরা দেওয়ার নিয়ম
যাদেরকে সাদাকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে না তারা হলেন ১. মেসাব পরিমাণ মালের মালিক।
২.নিজ পিতা, মাতা, দাদা ও দাদী
৩.নিজ সন্তান নাতি ও নাতনি
৪. সত্যিকারের আওলাদে রাসূল
৫.কোন অমুসলমান ব্যক্তি বিধর্মী রাজ্যের প্রজা হলে
ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব | ফিতরা দেওয়ার নিয়ম
ফিতরা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের আদায় করা ওয়াজিব। এক্ষেত্রে ফিতরা আদায়ের নিসাব যাকাতের হিসাবে সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে যাকাত ফরজ হয় নেসাব পরিমাণ সম্পদ ব্যক্তির কাছে এক বছর গচ্ছিত থাকলে কিন্তু ফিতরা ওয়াজিব হয় হিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলে সেক্ষেত্রে এক বছর বা কতটুকু সময় সম্পদ তার মালিকানা রয়েছে এ বিষয়টি বিবেচিত নয়। ফিতরা আদায়ের নিসাব পরিমান সম্পদ বলতে বোঝানো হয়েছে কোন ব্যক্তির জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ব্যয় ও ঋণ বাদ দিয়ে যদি তার কাছে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমপরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তার জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।
আশাকরি ফিতরা কত টাকা ২০২৩ এবং ফিতরা দেওয়ার নিয়ম জানতে পেরেছে আরো কিছু জানতে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)