রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি? অনেকে জানতে চেয়েছেন কোন কোন কাজ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। রমজান মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বরকতময় মাস হিসেবে সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অবতরণ করে। রমজান মাসে ৩০ দিন রোজা রাখা প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের জন্য ফরজ করা হয়েছে। রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি স্তম্ভের তৃতীয় তম। রোজা এমন একটি শারীরিক ইবাদত যেটি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। তাই আল্লাহ অঙ্গীকার বদ্ধ হয়েছে প্রত্যেক রোজাদারের পুরস্কার আল্লাহ তার নিজের হাতে দিবেন। রোজা রাখা যেমন আল্লাহর নির্দেশিত অন্যতম বড় একটি ইবাদত তেমনি কিছু ভুলের কারণে ভঙ্গ হতে পারে রোজা। আজকে আমরা তেমনি কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন দেখে আসি রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি? কি কি কারনে রোজা ভঙ্গ হয়।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ
রোজা ভঙ্গের বিভিন্ন কারণ সমূহের মধ্যে রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণ রয়েছে ৭টি। যেমন : ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলার পর রোজা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হয় , কুলি করার সময় অনিচ্ছাই পেটে পানি গেলে রোজা ভঙ্গ হয়, সাওম পালনকারীকে জোর করে কিছু পানাহার করালে রোজা ভঙ্গ হয়, প্রস্রাব পায়খানার রাস্তার মাধ্যমে ঔষধ বা অন্য কিছু গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হয়। নিচে রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ তুলে ধরা হলো।
১.ভুলবশত রাত এখনো বাকি আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহারি খেলে রোজা ভঙ্গ হয়।
২.কুলি করার সময় রোজা স্মরণ অবস্থায় পেটে পানি চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়
৩.ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলার পর সাউন্ড ভঙ্গ হয়েছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হয়।
৪.রোজা পালনকারীকে জোর করে কিছু পানাহার করালে রোজা ভঙ্গ হয়।
৫.ইফতারের সময় হয়েছে মনে করে সূর্যাস্তের আগেই ইফতার করলে রোজা ভঙ্গ হয়।
৬.ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভর্তি বমি করলে রোজা ভঙ্গ হয়
৭.প্রসাব পায়খানা রাস্তার মাধ্যমে ঔষধ বা অন্য কিছু গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হয়।
তথ্যসূত্র : সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্য বই ইসলাম শিক্ষা
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ হাদিস ও মাসালার আলোকে
নিচে ৭টি রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি তা দেওয়া হল।
১. যাওয়াহিরুল ফিকাহ গ্রন্থের ৩৭৮ নম্বর পৃষ্ঠায় বর্ণিত বিড়ি, সিগারেট হুকা বা এমন নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করলে রোজা ভঙ্গ হয়।
২.ফাতাওয়াশামী গ্রন্থের ৩৭৫ নম্বর পৃষ্ঠায় বর্ণিত, ভুলে স্ত্রী সম্ভগের পর রোজা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে আবার স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হলে রোজা ভঙ্গ হয় একই গ্রন্থের ৩৭৪ নম্বর পৃষ্ঠায় রয়েছে যদি কেউ রাত ধারণা করে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়, অতঃপর সুবহে সাদিকের কথা জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ সহবাস থেকে বিরত হয়ে যায় তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়।
৩.ফাতাওয়া দারুন উলুম গ্রন্থের ৪১৭ নাম্বার পৃষ্ঠায় বর্ণিত, রোজা থাকা অবস্থায় হস্তমৈথুন করলে রোজা ভঙ্গ হয়।
৪.ফাতওয়া শামী গ্রন্থের ৩৬৭ নম্বর পৃষ্ঠায় বর্ণিত, রোজা থাকা অবস্থায় দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি তা থুতুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় অতঃপর কণ্ঠনালীতে চলে যায় তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়।
৫. মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হলে রোজা ভঙ্গ হয়।
৬.মাজালিসু শারহি রমাদান গ্রন্থের ৭১ নাম্বার পৃষ্ঠায় বর্ণিত, রক্ত দেওয়া শিঙ্গা লাগানোর পর্যায়ে ভুক্ত। কারণ রক্ত দেওয়ার ফলে শরীরের উপর শিঙ্গা লাগানোর মত প্রভাব পড়ে। তাই রোজাদারদের রোজা থাকা অবস্থায় রক্ত দিলে রোজা ভঙ্গ হবে। এবং সেদিনের রোজা কাজা করবে।
৭.মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ” অযুর সময় ভালো করে নাকে পানি দাও যদি তুমি রোজাদার না হও ” এ কথা দিয়ে বোঝা যায় ওযু করার সময় নাক দিয়ে পানি কন্ঠনালীতে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবে।
মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ
আমরা সকলেই জানি নারীদের মাসের নিদ্রিস্ট সময়ে হায়েজ বা মাসিক হয়ে থাকে। এ সময় মেয়েদের রোজা রাখা নিষেধ করেছেন।
সহিহ বুখারির (৩০৪) বলা হয়েছে, হায়েজ ও নিফাসের কারণে নারীদের রোজা ভেঙে যায়। নবী করিম (সা.) বলেন: ‘যখন নারীদের হায়েজ হয়, তখন কি তারা নামাজ ও রোজা ত্যাগ করে না!?’
বি: দ্র: ইফতারের ১ অথবা ২ মিনিট আগেও যদি হায়েজ হয় তাহলেও তার রোজা ভঙ্গে যাবে।
রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ | রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি?
রোজা মাকরূহ হওয়ার ৫টি কারণ রয়েছে নিচে রোজা মাকরূহ হওয়ার ৫টি কারণ বর্ণনা করা হলো।
১.অন্যের গীবত অর্থাৎ দোষ ত্রুটি বর্ণনা করা।
২.মিথ্যা কথা বললে অশ্লীল আচরণ বা গালমন্দ করলে।
৩.কুলি করার সময় গড়গড়া করলে কারণ এতে গলার ভেতরে পানি ঢুকে গিয়ে রোজা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকে। ৪.যথাসময়ে ইফতার না করলে।
৫.গরম রোধে গায়ে ঠান্ডা কাপড় জড়িয়ে রাখলে বা বারবার কুলি করলে।
তথ্যসূত্র : সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্য বই ইসলাম শিক্ষা
রোজা কাযা হওয়ার কারণ | রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি?
কোনো কারণে অনিচ্ছায় যদি সাওম ভেঙে যায় কিংবা কোনো ওযরে তা পালন করা না হয়, তবে একটি সাওমের পরিবর্তে একটি সাওমই রাখতে হয়। একে কাযা সাওম বলে। সাওম কাযা করার কারণসমূহ
১. সাওম পালনকারী রমযান মাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে বা সফরে থাকলে অথবা অন্য কোনো ওযরের কারণে সাওম পালনে অপারগ হলে।
২. রাত মনে করে ভোরে পানাহার করলে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে। ৩. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভর্তি বমি করলে।
৪. জোরপূর্বক সাওম পালনকারীকে কেউ পানাহার করালে।
৫. কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি পেটে গেলে।
৬. ভুলক্রমে কোনো কিছু খেতে শুরু করার পর সাওম নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে পুনরায় খেলে।
৭. দাঁত হতে ছোলা পরিমাণ কোনো জিনিস বের করে খেলে।
উল্লিখিত অবস্থায় সাওম নষ্ট হলেও সারা দিন না খেয়ে থাকতে হয় এবং পরে কাযা করতে হয়।
তথ্যসূত্র : সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্য বই ইসলাম শিক্ষা
আরো পড়ুনঃ সকল জেলার সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৩
রোজা ভঙ্গের কাফফারা | কাফফারা রোজার নিয়ম
ইচ্ছাকৃতভাবে সাওম পালন না করলে বা সাওম রেখে বিনা কারণে ভেঙে ফেললে কাযা এবং কাফ্ফারা উভয়ই ফরজ হবে। সাওমের কাফ্ফারা নিম্নরূপ:
১. একাধারে দুই মাস সাওম পালন করা।
২. এতে অক্ষম হলে ৬০ জন মিসকিনকে পরিতৃপ্তির সাথে দুই বেলা খাওয়ানো অথবা
৩. একজন দাসকে স্বাধীনতা প্রদান করা।
একাধারে দুই মাস কাফ্ফারার সাওম আদায়কালীন যদি মাসে দুই-একদিন বাদ পড়ে যায়, তবে পূর্বের সাওম বাতিল হয়ে যাবে। পুনরায় নতুন করে শুরু করে দুই মাস বিরতিহীনভাবে সাওম পালন করতে হবে।
তথ্যসূত্র : সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্য বই ইসলাম শিক্ষা
আশাকরি রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি তা বুঝতে পেরেছেন। আরো কিছু জানার থাকলে চিভে কমেন্ট করতে পারেন। ধন্যবাদ…
(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)