শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কি, শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত, শবে বরাত ২০২৩ কত তারিখে। শবে বরাত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস ও শবে বরাতের ফজিলত নিয়ে থাকছে আজকের প্রতিবেদনটি। ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের জন্য একটি ইবাদতের রাত হলো শবে বরাতের রাত। এই রাতে আল্লাহর বান্দার মনের ইচ্ছা পূরণ করেন এবং বান্দা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ বান্দার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এই রাতে পৃথিবীর সকল মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নানা ধরনের ইবাদত করে থাকেন আর তার মধ্যে অন্যতম শবে বরাতের রাতে অনেক বেশি বেশি পরিমাণ নফল নামাজ আদায় করা । প্রথমেই জানানো হবে শবে বরাতের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
অনেকে মনে করেন শবেবরাতের জন্য আলাদাভাবে নামাজ আদায় করতে হয়। আসলে শবে বরাতের জন্য আলাদাভাবে স্পেশাল কোন নামাজ নেই। তবে শবে বরাতের দিন (আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ) সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে ৬ রাকাত নফল নামাজ পড়া উত্তম। এই ছয় রাকাতের প্রথম দুই রাকাত বান্দার হায়াতের বরকত বৃদ্ধি করে পরের দুই রাকাত বান্দার ঈমানকে হেফাজত করে এবং শেষের দুই রাকাত বান্দাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হাওয়া থেকে বিরত রাখে।
এছাড়াও সারা বিশ্বের মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নানা ধরনের ইবাদত করে থাকেন আর এ সকল ইবাদতের মধ্যে শবে বরাতের রাতে বান্দা অনেক বেশি বেশি পরিমাণ নফল নামাজ আদায় করে। এক্ষেত্রে শবে বরাতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কত রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে তার হিসাব নেই। তবে শবে বরাতের রাতটি মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বরকত ময় রাত তাই এই রাতে বান্দা যত বেশি আল্লাহর ইবাদত করবে আল্লাহ খুশি হয়ে বান্দার সকল গুনাহ মাফ করে দিবে। এজন্য মুসলমানরা এই রাতে অনেক বেশি নফল নামাজ আদায় করে চলুন দেখে আসি নফল নামাজ আদায়ের নিয়ম।
শবে বরাতের নফল নামাজের নিয়ম
শবে বরাতের রাতে নফল নামাজ আদায়ের নিয়ম যেহেতু শবে বরাতের জন্য আলাদাভাবে কোন নামাজ নেই তাই এক্ষেত্রে মুসল্লিরা এই রাতে অনেক বেশি বেশি পরিমাণ নফল নামাজ আদায় করবে। নফল নামাজ সাধারণত প্রত্যেকবার দুই রাকাত করে পড়তে হয়। শবে বরাতের রাতে আদায় করা নফল নামাজও অন্য সময় পড়া নফল নামাজের মত করে আদায় করতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রথমে দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়াতে হবে। পরে সুরা ফাতেহা একবার পাঠ করে সাথে একবার আয়তুল কুরসি এবং ১৫ বার করে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হয়। শেষ বৈঠক এরপর সালাম ফিরিয়ে প্রত্যেক রাকাতে ১২বার করে দুরুদ শরীফ পড়তে হয়।
শবেবরাতে ৮ রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম
শবে বরাতের ৮ রাকাত নফল নামাজের মধ্যে প্রত্যেকবার দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক রাকাতে নিয়াত শেষে বুকে হাত বেঁধে সুরা ফাতেহা পাঠ করার পর সূরা ইখলাস ৫ বার পাঠ করতে হয়। এভাবে করে শেষ রাকাতে শেষ বৈঠকের পর সালাম ফেরাতে হয়।
শবে বরাতের ১২ রাকাত নফল নামাজের নিয়ম
১২ রাকাত নফল নামাজ প্রত্যেকবার দুই রাকাত করে পড়তে হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রাকাতে নিয়ত করে বুকে হাত বাধে প্রতিরাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর দশবার সূরা এখলাছ পাঠ করতে হয়। এভাবে প্রতিবার সালাম ফিরিয়ে ১০ বার কালেমায়ে তাওহীদ ১০বার কালেমায় তামজিদ এবং ১০বার দুরুদ শরীফ পাঠ করতে হয়।
শবেবরাতে ১৪ রাকাত নফল নামাজ পড়লে প্রতি রাকাতে নিয়ত করে বুকে হাত বেঁধে সূরা ফাতিহা ও যে কোন একটি সূরা মিলিয়ে করতে হবে এভাবে করে দুই রাকাত করে ১৪ রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত | শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
শবে বরাতের জন্য আলাদা করে কোন নামাজ বা ইবাদত নেই। তবে এই রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অনেক বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা যায়। শবে বরাতের নফল নামাজ দুই রাকাত করে করতে হয়। এক্ষেত্রে শবে বরাতের নামাজের নিয়ত হলো “নাওয়াইতুয়ান উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাতাই ছালাতি লাইলাতিল বারাতিন নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লা হু আকবর”
এছাড়াও শবে বরাতের নামাজ এর নিয়ত বাংলায়ও করা যায় সে ক্ষেত্রে শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজের বাংলায় নিয়ত “শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ কিবলামুখী হয়ে আদায় করছি আল্লাহু আকবার ”
শবে বরাত ২০২৩ কত তারিখে বাংলাদেশে
গত ২২ ফেব্রুয়ারি, বুধবার বাংলাদেশের আকাশে আরবি ১৪৪৪ হিজরীর পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে সেই হিসাবে আগামী ৭ই মার্চ রোজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রে বাংলাদেশে শবে বরাতের রাত নির্ধারিত হয়েছে। শবে বরাত সম্পর্কে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন একদা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহু ওসাল্লাম বলেছিলেন তোমরা শাবান মাসের অর্ধেক হলে ( ১৪ তারিখ) দিবাগত রাত্রে আল্লাহর ইবাদত কর এবং তোমাদের মনে যা ইচ্ছা তা পাওয়ার জন্য আল্লাহর তায়ালার কাছে চাবে।
শবে বরাতের ফজিলত | শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
শবে বরাত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একটি বরকত ময় রাত। বান্দা ক্ষমা চাইলে আল্লাহ এই রাতে বান্দাদের সব রকমের পাপ থেকে মুক্তি দেন তাই এই রাতের নামকরণ করা হয়েছে শবেবরাত। হাদীস শরীফে বর্ণিত আল্লাহ শবে বরাতের রাতে বান্দা ক্ষমা চাইলে সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন শুধুমাত্র মুশরিক ও হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া। এ প্রসঙ্গে ইবনে মাজাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তয়ালা মধ্য সাবানের রাত ( শবে বরাত)আত্মপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তার সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করে দেন।
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে অন্য আরো একটি হাদীস শরীফে আলী ইবনে আবি তালেব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন মধ্য সাবানের রাত আসে ( আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ ) তখন তোমরা রাত জেগে নামাজ আদায় করবে আর দিনে রোজা পালন করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেন, আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকরী আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন বিপদে নিপতিত ব্যক্তি আমি তাকে সুস্থতা দান করব। এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে।
ইবনে মাজাহ :১৩৮৮
শবে বরাতের রাতে বান্দা ক্ষমা চাইলে আল্লাহ বান্দার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন তবে আল্লাহু তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না
১.হিংসুক শ্রেণীর লোক
২.আল্লাহর শিরককারী
৩.মানুষ হত্যাকারী
শবে বরাতের দিন রাতে আল্লাহ তার সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করে দেন শুধুমাত্র এই তিন শ্রেণীর মানুষ ছাড়া। অর্থাৎ আল্লাহ এই তিন শ্রেণীর পাপকে ক্ষমা করবেন না হলে এটা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একটি সতর্কতা। এই তিন প্রকারের পাপ থেকে সকলকে দূরে থাকতে হবে।
আরো পড়ুন: শবে বরাতের ইবাদত ও ফজিলত
আশাকরি শবে বরাতের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে সঠিক ধারনা পেয়েছেন। আরো কিছু জানতে নিচে কমেন্ট করতে পারেন।
( সবার আগে সব খবর প্রতি মুহূর্তে পেতে ফলো করুন আমাদের Google News পেজ)