আজকের এই নিবন্ধে নবম ও দশম শ্রেনীর কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর। তাহলে চলুন দেশে আসি ২০২৩ সালের সিলেবাস অনুযায়ী কপোতাক্ষ নদ কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর সৃজনশীল।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-১
উদ্দীপক:- ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। মিছিলটা যখন মেডিকেল কলেজের সামনে আসে তখন এলোপাতাড়ি গুলিতে ছত্রভঙ্গ হয় ছাত্র-জনতা । তপু প্ল্যাকার্ড হাতে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। তপুর প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’।
ক. অষ্টককে ইংরেজিতে কী বলা হয়?
খ. চতুর্দশপদী কবিতার অষ্টক ও ষটকের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
গ. তপুর দেশপ্রেমের সঙ্গে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের দেশপ্রেমের সাদৃশ্য অঙ্কন করো ।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) অষ্টককে ইংরেজিতে Octave বলা হয় ।
খ) সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার গঠনপ্রকৃতি অনুযায়ী ও ভাবগত বিবেচনায় অষ্টক এবং ষটকের বৈশিষ্ট্য অনুসারেই এ কবিতার আঙ্গিক পূর্ণতা পায় । সনেটের প্রথম আট চরণ বা অষ্টকে কবিতার ভাবের প্রবর্তনা এবং ষষ্ঠকে তার পরিণতি বর্ণিত হয়। ব্যক্তিগত আবেগের হাহাকারব্যঞ্জক কবিতা সনেটের ষটকের ক্ষেত্রেও প্রথম চার চরণ বিশ্লেষণ এবং শেষ দুই চরণ একটি মীমাংসার ইঙ্গিত বহন করে।
উত্তরের সারবস্তু: সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম আট চরণকে অষ্টক এবং শেষের ছয় চরণকে ষটক বলে সনেটের গঠনপ্রকৃতি অনুযায়ী ও ভাবগত বিবেচনায় অষ্টক এবং ষটকের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ও সুনির্দিষ্ট।
গ) প্রদত্ত উদ্দীপকে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় তপুর জীবনদানের চিত্রও দেশপ্রেমের চূড়ান্ত স্মারক, যা ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের দেশপ্রেমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ । দেশের সঙ্গে মানুষের আবেগ ও অনুভূতির সম্পর্ক নিবিড়। আধুনিক বাংলা কবিতার প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দশপদী কবিতা ‘কপোতাক্ষ নদ’-এ তাঁর সুগভীর দেশপ্রেমের আবেগ বর্ণিত হয়েছে।
আলোচ্য কবিতায় কবির প্রবাসজীবনে শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ যেন গভীর দেশপ্রেমের অনুষঙ্গরূপে ধরা দিয়েছে।বিদেশি ভাষা কাব্য রচনার মোহে ব্যাকুল কবি মাতৃভূমি, পরিবার, শৈশবের স্মৃতি এবং ধর্ম ত্যাগ করে প্রবাসে যান। বিপুল সাধনার পরও কবিখ্যাতির বদলে নিদারুণ দুঃখ-দুর্দশাই সেখানে সঙ্গী হয়েছিল । পক্ষান্তরে মাতৃভাষায় কাব্য রচনা করে সহজেই তিনি কবিখ্যাতির বরমাল্যে ভূষিত হন । এ অবস্থায় ফ্রান্সের ভার্সাই নগরে বসে কবির যাবতীয় প্রাণাবেগ বিপুলভাবে প্রবাহিত হয় ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়।
অপরদিকে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে সম্মলিত ছাত্র-জনতার সঙ্গে শামিল হলে পুলিশের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারায় উদ্দীপকের তপু। মৃত্যুমুখে পড়ে যাওয়ার সময়ও তার হাতে ধরা ছিল এদেশের কোটি মানুষের সোচ্চার প্রাণের দাবি ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। প্রবল দেশপ্রেমের সুতীব্র প্রেরণা ছাড়া এ রকম আত্মত্যাগ অসম্ভব। তাই প্রেক্ষিত ও উপজীব্য ভিন্ন হলেও তপুর দেশপ্রেমের সঙ্গে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার দেশপ্রেমের গভীর সাদৃশ্য বিদ্যমান ।
উত্তরের সারবস্তু: প্রবাসজীবনে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের যাবতীয় প্রাণাবেগের উদ্ভাসন ঘটেছে তাঁর শৈশবের নদী কপোতাক্ষকে ঘিরে। উদ্দীপকে বর্ণিত তপুর দেশপ্রেম মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংকল্পে প্রণোদিত। প্রেক্ষিত, প্রসঙ্গ ও পরিণতি এক না হলেও উভয় ক্ষেত্রেই অনুভূতিগত সাদৃশ্য একই।
ঘ) ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় শৈশবের নদের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে কবির সুগভীর দেশপ্রেম উদ্গত হয়েছে, যা প্রদত্ত উদ্দীপকের তপুর মাতৃভাষার প্রতি প্রবল অনুরাগ ও আত্মত্যাগের মধ্যে লক্ষ করা যায়।
দেশপ্রেমের চেতনা একটি অনুভূতিগত ব্যাপার। নানাভাবে নানাদিক দিয়েই এটি প্রকাশিত হতে পারে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়েছে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার প্রেরণার মধ্য দিয়ে । এখানে কবির দেশপ্রেমের ফল্গুধারা প্রকাশিত হয়েছে শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে কেন্দ্র করে।
আলোচ্য উদ্দীপকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্রদের মিছিলের কথা উঠে এসেছে। সেই মিছিলে পুলিশ গুলি বর্ষণ করলে তপুর গায়ে গুলি লেগে সে শহিদ হয়। এখানে ভাষা আন্দোলনে শহিদ তপু রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার দাবিতে জীবন দিয়ে দেশপ্রেমের মহিমাকে প্রজ্বলিত করেছে। স্বদেশকে হৃদয় দিয়ে অনুভবের এমন দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত আমরা আলোচ্য কবিতার কবির মাঝেও দেখতে পাই। আলোচ্য কবিতাটি কবির প্রবাসজীবনের গভীর স্মৃতিকাতরতা ও অনুতাপে সিক্ত। বিদেশি ভাষায় সাহিত্য সাধনার মোহে বিচলিত কবি শৈশবে নিজ ভাষা, ধর্ম এমনকি মাতৃভূমিও ত্যাগ করেছিলেন।
আত্মোপলব্ধি হলে নানা দুঃখ-বিপর্যয়ে ক্লান্ত কবি আবিষ্কার করেন মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চায় তাঁর গৌরব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এ রকম অনুতাপে অনুভূতির প্রগাঢ় অতলে তিনি মাতৃভূমির প্রতি গভীর প্রেম ও আকর্ষণ অনুভব করেন। উদ্দীপকটি বিশ্লেষণে দেখতে পাই, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার মর্যাদায় উদ্দীপকের তপু নির্ভীক সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল । পরিণামে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। মাতৃভাষার জন্য তপুর এ আত্মত্যাগের চেতনাগত প্রেরণা প্রকারান্তরে দেশপ্রেমেরই নামান্তর। এ দেশপ্রেমের চেতনাই ভিন্নরূপে প্রকাশিত হয়েছে কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়, স্বদেশের প্রতি মমত্ববোধের মধ্য দিয়ে। উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতা এভাবেই চেতনাগত সম্পর্কসূত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ।
উত্তরের সারবস্তু: মাতৃভাষার জন্য ১৯৫২ সালে উদ্দীপকে বর্ণিত তপুর আত্মত্যাগের প্রেরণা প্রকারান্তরে দেশপ্রেমেরই নামান্তর। এ দেশপ্রেমের চেতনাই ভিন্নরূপে প্রকাশিত হয়েছে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়, শৈশবের নদের অনুষঙ্গে স্বদেশের প্রতি কবির মমত্ববোধের মধ্য দিয়ে। উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতা এভাবেই চেতনাগত সম্পর্কসূত্রে তাৎপর্যপূর্ণ।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-২
রোমেল এসএসসি পাশ করেই গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছে। এখন ঢাকায় ব্যবসায়-বাণিজ্য করছে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষ করে রাতে যখন সে ঘুমাতে যায়, তখন শৈশবের নানারকম স্মৃতি তার মনে পড়ে। গ্রামের মাঠ-ঘাট-নদী-প্রকৃতি যেন তাকে বারবার ডেকে যায় । ii. আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায় ।
ক. ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কোন ধরনের সাহিত্যকর্ম?
খ. ‘সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে’— উক্তিটি ব্যাখ্যা করো ।
গ. উদ্দীপক (i)-এ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো
ঘ. “উদ্দীপক (ii)-এ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলভাব প্রকাশিত হয়েছে”— উক্তিটি বিশ্লেষণ করো ।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রহসন জাতীয় সাহিত্যকর্ম ।
খ) কবি সর্বদা একান্ত নিরিবিলিতে কপোতাক্ষ নদের কথাই ভাবেন । কপোতাক্ষ নদ হচ্ছে কবির শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত নদী । সুদূর ফ্রান্সে বসবাস করা সত্ত্বেও শৈশবের এ নদীটিকে ভুলতে পারেননি। তাই তিনি একান্ত মুহূর্তে সর্বদা কপোতাক্ষ নদের কথাই ভাবেন । প্রশ্নোক্ত পক্তিটিতে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
ত্তরের সারবস্তু: কবি সর্বদা একান্ত নিরিবিলিতে কপোতাক্ষ নদের কথাই ভাবেন ।
গ) উদ্দীপক (i)-এ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় ফুটে ওঠা কবির স্মৃতিকাতরতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের স্মৃতিচারণা করেছেন। তিনি দেশ ছেড়ে বহুদূরে অবস্থানকালেও ভুলে থাকতে পারেননি জন্মভূমির প্রিয় এ নদের সাহচর্য। তাই প্রবাস জীবনেও প্রতি মুহূর্তে তাঁর মনে পড়ে কপোতাক্ষ নদের কথা । কপোতাক্ষ নদের জল তাঁর স্নেহের তৃষ্ণা মেটায়। সংগত কারণেই এ নদের স্নেহসুধা কবির কাছে মাতৃদুগ্ধের ধারা বলে মনে হয়েছে। এ সবই প্রবাসী কবিকে স্মৃতিকাতর করে তুলেছে।
উদ্দীপক (i)-এর রোমেল এসএসসি পাশ করেই শহরে চলে এসেছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যবসায়-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও শৈশবকালীন গ্রামে কাটানো দিনগুলোর কথা তার মনে পড়ে। বিশেষ করে, রাতে ঘুমাতে গেলে গ্রামের মাঠঘাট ও প্রকৃতির কথা তার বারবার মনে পড়ে। একইভাবে, ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবিও কপোতাক্ষকে কেন্দ্র করে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। শৈশবের স্মৃতিবিজরিত এ নদ যেন কবিকে স্নেহডোরে বেঁধে রেখেছে। আর তাই প্রবাস জীবনেও এ নদের স্নেহচ্ছায়ার কথা ভেবে আকুল হয়ে পড়েন কবি। সে বিবেচনায় উদ্দীপক (i)-এ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় ফুটে ওঠা কবির স্মৃতিকাতরতার দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা ভেবে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। একইভাবে, উদ্দীপক (i)-এর রোমেলও গ্রামের মাঠ ঘাট ও প্রকৃতির কথা ভেবে আকুল হয় ।
ঘ) ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় স্মৃতিকাতরতার আবরণে কবির অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে, যা উদ্দীপক (ii)-এর কবিতাংশেও একইভাবে পরিলক্ষিত হয় ।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষের প্রতি কবি হৃদয়ের গভীর ভাবাবেগ প্রকাশিত হয়েছে। একসময় কবি স্বীয় স্বপ্ন পূরণের জন্য স্বদেশ ছেড়ে ইউরোপে চলে যান। তবে সেখানে গিয়েও তিনি ভুলতে পারেননি মাতৃভূমি বাংলাকে।
সংগত কারণেই প্রিয় কপোতাক্ষের প্রতি তাঁর মিনতি, কপোতাক্ষ যেন কবির হয়ে তাঁর মাতৃভূমিপ্রীতি ও বাংলায় সাহিত্য সাধনার কথা দেশবাসীর কাছে পৌছে দেয় । উদ্দীপক (ii)-এর কবিতাংশে মাতৃভূমির প্রতি কবির গভীর অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলার সাথে কবি হৃদয়ের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। আর তাই মৃত্যুর পরও তিনি প্রিয় জন্মভূমি বাংলার কোলে বারবার ফিরে আসতে চেয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখি বা অন্য যেকোনো রূপেই হোক স্বদেশের প্রকৃতির সান্নিধ্যে ফিরে আসতে চান। এর মধ্য দিয়ে মাতৃভূমি বাংলার প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধ ও ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপক (ii)-এ ফুটে ওঠা মাতৃভূমিপ্রীতির এ দিকটি আলোচ্য কবিতাতেও একইভাবে পরিলক্ষিত হয়।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি তাঁর মাতৃভূমিকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। সে ভালোবাসা থেকেই কবি মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি তাঁর অনুরাগের কথা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কপোতাক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। একইভাবে, উদ্দীপক (ii)-এর কবিতাংশের কবিও মাতৃভূমি বাংলাকে এতটাই ভালোবাসেন যে মৃত্যুর পরও এদেশের বুকে তিনি ফিরে আসতে চান। অর্থাৎ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা ও উদ্দীপক (ii) উভয়ক্ষেত্রেই কবিদ্বয়ের অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ অর্থবহ।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা ও উদ্দীপক (ii) উভয়ক্ষেত্রেই মাতৃভূমি বাংলার প্রতি কবিদ্বয়ের গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-৩
উদ্দীপক:-
সনেট
স্তবক বিন্যাস বিষয়বস্তু
______________________________________________________
অষ্টক – ষটক ভাবের প্রবর্তন – ভাবের পরিণতি
ক. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার রচয়িতা কে?
খ. সনেটের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার সাথে কীভাবে সম্পর্কিত? আলোচনা করো । ঘ. সনেটের এই গড়নসৌষ্ঠব ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ক্ষেত্রে কতটা সফল? বিচার করো।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার রচয়িতা মাইকেল মধুসূদন দত্ত ।
খ) সনেট হচ্ছে চৌদ্দ চরণের অষ্টক ও যষ্টক দ্বারা নির্মিত কবিতা। ‘সনেট’ বা ‘চতুর্দশপদী’ কবিতায় চরণসংখ্যা চৌদ্দটি। এ ধরনের কবিতার প্রধান ভাগ দুটো হলো স্তবক বিন্যাস এবং বিষয়বস্তু। মূল ভাগের আবার দুটো করে উপভাগ বা বিভাজন রয়েছে। সনেটের প্রথম আট চরণকে অষ্টক এবং শেষের ছয় চরণকে যটক বলা হয়। প্রথম আট চরণে থাকে ভাবের প্রবর্তনা এবং শেষের ছয় চরণে থাকে ভাবের পরিণতি। অষ্টক এবং ষটকের সমন্বয়ে একটি অখণ্ড ভাব পূর্ণভাবে ফুটে উঠতে হয়। নতুবা তা সনেট হিসেবে সফল হয় না।
উত্তরের সারবস্তু: সনেট হচ্ছে চৌদ্দ চরণের অষ্টক ও ঘটক দ্বারা নির্মিত কবিতা। সনেটের প্রথম আট চরণকে অষ্টক এবং শেষের ছয় চরণকে ষটক বলে। প্রথম আর্ট চরণে থাকে ভাবের প্রবর্তনা এবং শেষের ছয় চরণে থাকে ভাবের পরিণতি।
গ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ একটি দেশপ্রেমমূলক সার্থক সনেট কবিতা ।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’কে সনেট কবিতা বলা যায়। কবিতাটির বিষয়বস্তুতে প্রবাসজীবনে স্বদেশের জন্য বেদনাদগ্ধ কবির করুণ আর্তনাদ ধ্বনিত হয়েছে। কবিহৃদয়ের এ অখণ্ড ভাবটি কবিতার স্তবক বিন্যাসের প্রথম আট চরণে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কবিতার দ্বিতীয়াংশে, অর্থাৎ ষটকে কপোতাক্ষ নদকে উপলক্ষ্য করে জন্মভূমির প্রতি কবিহৃদয়ের আকুলতা যেন বাঁধ ভেঙেছে। মাতৃভূমির স্নেহ-সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় কবির মন উতলা হয়ে উঠেছে।
উদ্দীপকের ছকটিতে সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। চতুর্দশপদী কবিতার মতো এ কবিতায়ও চৌদ্দটি চরণ আছে । প্রতি চরণে আছে চৌদ্দ মাত্রা। কবিতাটিতে সনেটের রীতি অনুসারে অন্ত্যমিল রক্ষা করা হয়েছে। যেমন— কখকখকখখক, গঘগ ঘগঘ।
এছাড়াও কবিতাটিতে কৰি পরিমিত পরিসরে একটি ক্ষুদ্র ভাবকে অখণ্ড ব্যঞ্জনা দান করেছেন। তাই উদ্দীপকে সনেট-এর যে গড়ন উল্লিখিত হয়েছে তার বিচারে ‘কপোতাক্ষ নদ’ নিঃসন্দেহে একটি সার্থক সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা। এদিক থেকে উদ্দীপকটি আলোচ্য ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার সাথে সম্পর্কিত। উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকে সনেটের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়ও এ সকল বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এদিক থেকে উদ্দীপকটি এ কবিতার সাথে সম্পর্কিত।
ঘ) উদ্দীপকে সনেট-এর গড়নসৌষ্ঠব সম্পর্কে যে ধারণা প্রদান করা হয়েছে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়ও তা সার্থকভাবে বিরাজমান।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। এ কবিতায় কবির শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে ঘিরে কবির হৃদয়াবেগের প্রকাশ ঘটেছে। এর প্রথম অংশে কবির ভাবের বিস্তৃতি ঘটেছে। আর দ্বিতীয় অংশে সে ভাব সুসংহত হয়ে পরিণতি লাভ করেছে।
উদ্দীপকের ছকে সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে এর প্রচলন করেন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কবিহৃদয়ের একটিমাত্র অখণ্ড ভাব বা অনুভূতি একটি বিশেষ পদ্ধতিতে চৌদ্দটি অক্ষরের সমন্বয়ে চৌদ্দ চরণ দ্বারা যখন রচিত হয় তখন তাকে সনেট বলে । এর দুটি অংশ। সনেটের প্রথম আট চরণকে অষ্টক এবং শেষের ছয় চরণকে ষটক বলে । প্রথম আট চরণে থাকে ভাবের প্রবর্তনা এবং শেষের ছয় চরণে থাকে ভাবের পরিণতি। ‘কপোতাক্ষ নদ’ও তেমনই একটি সনেট।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি চৌদ্দ পক্তিতে বিন্যস্ত। এর প্রতি পঙ্ক্তিতে চৌদ্দটি করে মাত্রা রয়েছে। সে হিসেবে এটি একটি সার্থক সনেট। আবার চৌদ্দ লাইনের সনেটের প্রথম আট লাইন অষ্টক এবং শেষের ছয় লাইন ষটক । ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটিতে এ বিভাজনও বজায় রয়েছে । এছাড়াও সনেটের পুরো অংশ জুড়ে একটিমাত্র আবেগ প্রকাশিত হয়। আলোচ্য কবিতাটিতেও একটি আবেগ পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হয়েছে। কবিতাটিতে কবির প্রবাসজীবনে স্বদেশের জন্য বেদনাদগ্ধ আত্মার করুণ আকুতি ধ্বনিত হয়েছে। কবিহৃদয়ের এ অখণ্ড ভাবটি কবিতার প্রথম আট চরণে চমৎকারভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । সে বিবেচনায় সনেট-এর গড়নসৌষ্ঠব ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় অষ্টক ও ষটক জুড়ে ধ্বনিত হয়েছে কবির প্রবাসজীবনে স্বদেশের জন্য বেদনাদগ্ধ আত্মার করুণ আকুতি । সনেটের গড়নসৌষ্ঠবকে ভিত্তি করে কবিতাটিতে দেশপ্রেমের নির্দিষ্ট আবেগ সার্থকভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-৪
উদ্দীপক:- আদি মহাকাব্য মহাভারত-রামায়ণ কিংবা হোমারের ইলিয়াড-ওডিসি’র কাহিনি ব্যাপ্ত হয়েছে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জুড়ে । আর মর্ত্যের নদী সেখানে বিশাল অংশ দখল করে আছে। ধ্রুপদী সাহিত্যে তা ভারতীয় কালিদাস কিংবা মধ্যযুগের শাহনামা’য় নদী মানবজীবনের সঙ্গে একীভূত। প্রাচীন সভ্যতাগুলো যেমন নদীকেন্দ্রিক ছিল, তেমনি সাহিত্যের আদি নিদর্শনে নদী তার গতিময়তায় কবিতা-গানে প্রাণ দান করেছে। বাংলা শিল্প-সাহিত্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য, নগর-জনপদ গড়ে উঠতে নদী বড়ো ভূমিকা রেখেছে।
ক. কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কত সালে পরলোকগমন করেন?
খ. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কপোতাক্ষ নদের প্রতি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মিনতির অন্তর্গত কারণ কী? ব্যাখ্যা করো । গ. উদ্দীপকের বক্তব্যটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ক্ষেত্রে কীরূপ প্রভাব ফেলেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার আলোকে উদ্দীপকের বক্তব্যের যথার্থতা বিচার করো।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭৩ সালে পরলোকগমন করেন।
খ) ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় দেশাত্মবোধের উজ্জীবনই কপোতাক্ষ নদের প্রতি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মিনতির মূল কারণ ।প্রথম জীবনে কবি ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি স্বদেশ ও স্বধর্ম ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমান । কিন্তু দীর্ঘ প্রবাসজীবনে ধীরে ধীরে তাঁর সে মোহ ভঙ্গ হয়। কবি বুঝতে পারেন, স্বদেশ এবং স্বভাষাই তাঁর সে স্বপ্নকে পূরণ করতে পারে এ কারণে কবি দেশাত্মবোধ দ্বারা উজ্জীবিত হয়েই শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কাছে তাঁর কথা বঙ্গবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মিনতি করেছেন ।
উত্তরের সারবস্তু: দেশাত্মবোধের উজ্জীবনই কপোতাক্ষ নদের প্রতি কবির মিনতির অন্তর্গত কারণ ।
গ) বাংলা সাহিত্যে নদ-নদীর প্রভাব তুলে ধরার দিক থেকে উদ্দীপকের বক্তব্যটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ একটি নদীকেন্দ্রিক কবিতা। এ কবিতায় শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে আশ্রয় করে কবি তাঁর ভাবাবেগের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। কবিতাটির প্রায় সমগ্র জুড়েই নদীর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নদী দেখলেও কপোতাক্ষ নদের মমতামাখা অনুভূতি কবি কোথাও খুঁজে পাননি। উদ্দীপকের প্রতিবেদনটিতে সাহিত্যে নদনদীর অপরিসীম প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সেখানে প্রতিবেদক দেখিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যে নদনদী কতটা প্রভাব বিস্তার করে আছে।
শুধু তা-ই নয়, উপমহাদেশের সাহিত্যেও নদনদীর প্রভাব অনস্বীকার্য। আদি মহাকাব্য রামায়ণ-মহাভারতেও নদীর প্রভাব সুস্পষ্ট। এক্ষেত্রে আলোচ্য প্রতিবেদনটির প্রতিবেদক মনে করেন, সাহিত্যের আদি নিদর্শনগুলোতে নদী তার গতিশীলতা দিয়েই প্ৰাণ দান করেছে। একইভাবে, আলোচ্য ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটিও কবির শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে আশ্রয় করেই রচিত হয়েছে। এ নদটিকে উপজীব্য করেই কবি তাঁর একান্ত অনুভূতির রূপায়ণ ঘটিয়েছেন, যা উদ্দীপকের বক্তব্যকেই নির্দেশ করে। এদিক বিবেচনায় উদ্দীপকের বক্তব্য আলোচ্য কবিতাটিকে প্রভাবিত করেছে।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে আশ্রয় করে কবি তাঁর ভাবাবেগের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। উদ্দীপকের বক্তব্যেও নদীকেন্দ্রিক সাহিত্যের কথাই বিধৃত হয়েছে ।
ঘ) উদ্দীপকের বক্তব্যে সাহিত্যে নদনদীর প্রভাবের কথা বিধৃত হয়েছে, যা ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় স্মৃতিকাতরতার আবরণে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ভাবাবেগের প্রকাশে কবি তাঁর শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদকেই আশ্রয় করেছেন। এ কবিতায় কপোতাক্ষ নদ যেন কবির সমস্ত ভাবাবেগের একান্ত আশ্রয় । উদ্দীপকের বক্তব্যে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় নদনদীর উপস্থিতির কথা বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ করে সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনগুলোতে নদনদী ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। মহাকবি হোমারের ইলিয়াড-ওডিসি থেকে শুরু করে শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য মহাভারত ও রামায়ণেও নদীর প্রভাব স্পষ্ট। এর পেছনে ক্রিয়াশীল সভ্যতার গোড়াপত্তনে নদনদীর ভূমিকা । সাহিত্য যেহেতু জীবনের কথা বলে, তাই জনজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণেই নদনদী সাহিত্যে বিশেষ স্থান লাভ করেছে।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটির মূল অনুষঙ্গ কপোতাক্ষ নামের এক নদ। শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত এ নদটিকে কবি নিজের সঙ্গে একাত্ম করে দেখেছেন । কবিতাটিতে তাই এ নদ কখনো কবির সখা রূপে আবার কখনো আত্মজ রূপে হাজির হয়েছে। এ নদকে আশ্রয় করেই কবিতাটিতে কবির সকল অনুভূতির রূপায়ণ ঘটেছে। এক্ষেত্রে এ নদ একদিকে যেমন স্বদেশের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র, অন্যদিকে স্নেহময়ী মাতা। পক্ষান্তরে, উদ্দীপকের বক্তব্যটি বিশ্বসাহিত্যে নদনদীর প্রভাবকে তুলে ধরেছে। আলোচ্য কবিতাটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ । সে বিবেচনায় সাহিত্যকে কেন্দ্র করে উদ্দীপকের বক্তব্যটি যথার্থ।
উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকের বক্তব্যে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় নদ-নদীর উপস্থিতির কথা বর্ণিত হয়েছে। আলোচ্য কবিতাটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সে বিবেচনায় সাহিত্যকে কেন্দ্র করে উদ্দীপকের বক্তব্যটি যথার্থ।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-৫
উদ্দীপক:- শুভ বাবু প্রায় এক যুগ আগে সরকারি বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় যান। পড়াশোনা শেষে সেখানেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি প্রচুর বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। কিন্তু, তারপরও তিনি সুখী নন। বিদেশে থেকেও সেখানকার প্রকৃতি-পরিবেশ, লোকালয় কোনো কিছুই তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। কাজের অবসরে মনটা শুধু পড়ে থাকে বাংলার সবুজ শ্যামল প্রান্তরে। যেখানে রয়েছে আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ, নদী তীরের সূর্যাস্তের দৃশ্য, সবুজ বনানী-কেটেছে তার শৈশব থেকে যৌবনের অফুরান সোনালি দিন।
ক. সনেটের অষ্টকে মূলত কী রয়েছে?
খ. ‘আর কি হে হবে দেখা?’— কবির এ সংশয়ের কারণ কী? ব্যাখ্যা করো ।
গ. সাদৃশ্যগত দিক হতে শুভ বাবুর উপলব্ধিটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির উপলব্ধির সাথে কতটুকু সংগতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো ।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।”
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) সনেটের অষ্টকে মূলত রয়েছে ভাবের প্রবর্তনা ।
খ) প্রশ্নোক্ত চরণটিতে ফুটে ওঠা কবির সংশয়ের কারণ তাঁর স্বদেশের সান্নিধ্য লাভের ব্যাকুলতা।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত মাতৃভূমিকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। আর তাই প্রবাসে থেকেও তিনি মাতৃভূমির প্রিয় নদ কপোতাক্ষের কথা ভেবে কাতর হন। কপোতাক্ষের মধুর স্মৃতি তাঁর মনে সদা জাগরূক ছিল। সংগত কারণেই দীর্ঘ প্রবাস জীবনে প্রিয় নদের সান্নিধ্য লাভের ব্যাকুলতা থেকে তাঁর মনে সংশয়ের সৃষ্টি হয়— – তিনি আর কপোতাক্ষের দেখা পাবেন কি না।
উত্তরের সারবস্তু: কবি বিদেশে অবস্থান করায় মাতৃভূমির সান্নিধ্যলাভ করতে পারবেন কি না এই সংশয়ই প্রশ্নোক্ত চরণে প্রকাশ পেয়েছে।
গ) উদ্দীপকের শুভ বাবুর উপলব্ধিটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির উপলব্ধির সঙ্গে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের শৈশবের প্রিয় নদ কপোতাক্ষের প্রতি অগাধ মমত্ববোধের প্রকাশ ঘটেছে। সে মমত্ববোধ থেকেই তিনি প্রিয় কপোতাক্ষকে গ্রহণ করেছেন সখারূপে। আর তাই বিদেশ-বিভুঁইয়ে থেকেও এ নদের কথা ভুলতে পারেননি তিনি। উদ্দীপকের শুভ বাবু একজন প্রবাসী বাঙালি। সরকারি বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় আসার পর একযুগ কেটে গেলেও মাতৃভূমিকে তিনি ভুলতে পারেননি।
ব্যক্তি জীবনে অগাধ বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেও তা তার মনে শান্তি এনে দিতে পারেনি। সবসময় তার মন পড়ে থাকে ছায়া সুনিবিড় বাংলার প্রকৃতিতে। বাংলার মাঠঘাট, নদী যেন তাকে ভেতর থেকে টানে। একইভাবে আলোচ্য ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবিও মাতৃভূমির প্রিয় নদের কথা ভেবে কাতর। সান্নিধ্যের ব্যাকুলতা থেকে কপোতাক্ষের কলধ্বনি তাঁর কানে সবসময় মায়ামন্ত্রের মতোই বাজে। অর্থাৎ উদ্দীপকের শুভ বাবু এবং আলোচ্য কবিতার কবি উভয়েই জন্মভূমির বিভিন্ন অনুষঙ্গকে কেন্দ্র করে স্মৃতিকাতর হয়েছেন। এদিক থেকে শুভ বাবুর উপলব্ধি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির উপলব্ধির সঙ্গে সম্পূর্ণ সাযুজ্যপূর্ণ।
উত্তরের সারবস্তু: কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে অবস্থানকালে স্বদেশের প্রতি টান অনুভব করেছেন তিনি। উদ্দীপকের শুভ বাবুর মাঝেও এই বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়।
ঘ) “উদ্দীপকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলভাবের প্রতিফলন ঘটেছে” — মন্তব্যটি যথার্থ বলেই আমি মনে করি।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় স্মৃতিকাতরতার আবরণে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। এ কবিতায় শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষকে কেন্দ্র করে কবি তাঁর হৃদয়াবেগের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এর মূলে রয়েছে জন্মভূমির প্রতি তাঁর অপার মমত্ববোধ। উদ্দীপকের শুভ বাবু সরকারি বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি সেখানেই থেকে যান।
কিন্তু ব্যক্তিজীবনে অর্জিত বিত্ত-বৈভব তার মনে শান্তি এনে দিতে পারেনি। আর দেশ ছাড়ার পর দীর্ঘ এক যুগ কেটে গেলেও দেশের প্রকৃতি পরিবেশকে তিনি ভুলতে পারেননি । কাজের ফাঁকে বাংলার চিরচেনা প্রকৃতি আর শৈশবের সোনালি দিনের কথা ভেবে কাতর হন তিনি । আলোচ্য কবিতাটিতেও এ বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কপোতাক্ষ নদকে কেন্দ্র করে জন্মভূমির প্রতি কবির গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটেছে। জন্মভূমিকে ভালোবাসেন বলেই জন্মভূমির স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ তাঁর কাছে এত প্রিয়।
সংগত কারণেই এ কবিতায় মাতৃভূমির প্রতি কবির হৃদয়াবেগ প্রকাশিত হয়েছে কপোতাক্ষকে আশ্রয় করে। একইভাবে উদ্দীপকের শুভ বাবুও দেশের চিরচেনা প্রকৃতিকে স্মরণ করেন দেশকে ভালোবাসেন বলেই। অর্থাৎ আলোচ্য কবিতা এবং উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রেই স্মৃতিকাতরতার আবরণে মূলত দেশাত্মবোধের প্রকাশ ঘটেছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় জন্মভূমির প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধের প্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপকেও একই বিষয়ের প্রকাশ ঘটেছে।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-৬
উদ্দীপক:- (i) বহুদিন পরে আজি মনে পড়ে পরিমায়ের কোল,
ঝাউশাখে সেথা বনলতা বাঁধি হরষে খেয়েছি দোল
(ii) গুগো আমার জন্মভূমি, ওগো অপৰূপা
ফিরে কি আর পাব তোমায়?
এ বিদেশে, বিভূঁইয়ে তোমারে স্মরি আনমনে
আঁখি মুছি সযতনে
তবু আশা পারিনে ছাড়িতে,
বেঁধে রেখেছো যে মা, তোমারই স্নেহ ডোরে।
ক. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার অষ্টকের মিল বিন্যাস কী?
খ. প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে বারি-রূপ কর তুমি’- এর দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের প্রথমাংশে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কোন দিকের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশ এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ঘটকের ভাবধারা একই সূত্রে গাথা”— মূল্যায়ন করো।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার অষ্টকের মিলবিন্যাস কখকখ কখখক।
খ) কপোতাক্ষ নদ নিজেকে প্রজা মনে করে রাজারূপী সাগরকে কর হিসেবে নিজের জল প্রদান করে। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত সাগরকে দেখেছেন রাজারূপে। প্রজামাত্রই রাজাকে কর বা খাজনা দিয়ে থাকে প্রজারূপী কপোতাক্ষের জল কর বা খাজনা হিসেবে সাগরে প্রতিনিয়ত প্রবাহিত হয়। প্রশ্নের কথাটি দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।
উত্তরের সারবস্তু: নিজেকে প্রজা ভেবে কপোতাক্ষ নদ রাজরূপী সাগরকে কর হিসেবে জল প্রদান করে— প্রশ্নোত্ত চরণে এ বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে।
গ) উদ্দীপকের প্রথমাংশের সাথে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির শৈশবের স্মৃতিকাতরতার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে
মাইকেল মধুসূদন দত্ত খ্যাতির মোহে আচ্ছন্ন হয়ে প্রবাসী হলেও শৈশবের স্মৃতিঘেরা কপোতাক্ষ নদকে ভুলে থাকতে পারেননি। এ নদ কবিকে অনন্য ভালোবাসায় সিক্ত করেছে, মায়ের স্নেহডোরে বেঁধে তাঁর শৈশবস্মৃতিকে জাগ্রত করেছে। তাইতো ভালোবাসা প্রত্যাশী কবি এই নদের স্নেহ ধারায় মিশে ফিরে আসতে চান তাঁর প্রিয় জন্মভূমিতে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির স্মৃতিকাতরতার মাধ্যমে গ্রামবাংলার আবহ উঠে এসেছে। ঝাউগাছ, বনলতা, ঝাউয়ের শাখে বনলতা বেঁধে দোল খাওয়া প্রভৃতি চিত্র ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকের কবি যেমন তাঁর গ্রামীণ আবহে কাটানো শৈশবের স্মৃতিকাতর তেমনি মাইকেল মধুসূদন দত্তও পরভূমে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের প্রথমাংশে বিস্তৃত কবিতাংশটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার স্মৃতিকাতরতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার প্রকাশে ঘটেছে। উদ্দীপকের প্রথমাংশটা কবির স্মৃতিকাতরতার বিষয়টিই প্রতিনিধিত্ব করেছে।
ঘ) উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশে প্রকাশিত কবির অনুভূতি এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ঘটকের ভাবধারায় কবির আত্মভাবনার উপলদি একই সূত্রে গাঁথা। কৰি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় সনেটের রীতি-পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। সে পদ্ধতিতে তিনি কবিতার দ্বিতীয় স্তবকে বা ষটকে কপোতাক্ষ নদ সম্পর্কে তাঁর আত্মভাবনার কথা ব্যক্ত করেছেন। অষ্টকে তিনি যে ভাবের প্রবর্তনা করেছেন, ফটকে তা সম্পন্ন করেছেন।
উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশ কৰি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতোই স্মৃতিকাতরতার আবরণে দেশমাতৃকার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় আচ্ছন্ন। আলোচ্য কবিতায় জন্মভূমির প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও স্মৃতিচারণের পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত কবি আর জন্মভূমির দেখা পাবেন কিনা এমন আশংকাও প্রকাশ করেছেন । কবি তবুও আশা করেন মায়ের স্নেহ-ভোরে বাঁধা জন্মভূমিতে তিনি ফিরবেন।
উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশে এবং কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ষষ্টকের স্তবকে কবির দেশাত্মবোধ ও স্মৃতিকাতরতার দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে। উভয় অংশের কবিই স্মৃতিবিজড়িত স্থানের সাথে সাক্ষাৎ পাবেন কিনা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই আশঙ্কা থেকেই তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কপোতাক্ষ নদ কিংবা জন্মভূমির সাথে সাক্ষাতের আশা ব্যক্ত করেছেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশ এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ঘটকের ভাবধারা একই সূত্রে গাঁথা।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ষটকে মাতৃভূমির সাথে কবির মিলনের শঙ্কা এবং প্রত্যাশা প্রকাশিত হয়েছে। উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশেও এই
বিষয়ের প্রকাশ ঘটেছে।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-৭
উদ্দীপক:- স্তবক ১: মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে
স্মৃতি যেন আমার এ হৃদয়ে বেদনার রঙে রঙে ছবি আঁকে।
স্তবক ২: এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।
ক. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার প্রথম আট চরণের অন্ত্যমিল কী?
খ. ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের স্তবক ১-এ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা করো ।
ঘ. উদ্দীপকের স্তবক-২ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূল চেতনাকে ধারণ করেছে”—উক্তিটি মূল্যায়ন করো।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার প্রথম আট চরণের অন্ত্যমিল হচ্ছে— কখকখ কখখক।
খ) কবির কাছে জন্মভূমি মায়ের মতো বলে কপোতাক্ষ নদকে তিনি ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলেছেন। কপোতাক্ষ কবির স্মৃতিবিজড়িত একটি নদ। মা যেমন তাঁর সন্তানকে নিবিড় মমতায় বুকের দুধ পান করিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন, তেমনি কপোতাক্ষের জলও বাংলা জনপদের মাঝে প্রাণ সখ্যার করে। তাই কবি কপোতাক্ষের জলকে ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
উত্তরের সারবস্তু: দেশকে মা হিসেবে কল্পনা করে মাইকেল মধুসূদন দত্ত কপোতাক্ষ নদের জলকে মাতৃদুগ্ধ হিসেবে তুলনা করেছেন।
গ) উদ্দীপক-১-এ প্রকাশিত ভাবটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির ফেলে আসা স্মৃতি জেগে ওঠার দিকটিকে নির্দেশ করে।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি শৈশবস্মৃতি স্মরণ করে কাতর হন। প্রবাসে থাকাকালেও তাঁর মনে পড়ে শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলো। কপোতাক্ষ নদের তীরে কাটানো সময়গুলো তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে হয়।
উদ্দীপক-১-এর কবিতাংশেও অতীতের স্মৃতিকাতর মনের পরিচয় ফুটে উঠেছে। এ কবিতাংশে কবি অতীতের স্মৃতি মনে করে বেদনায় কাতর হয়েছেন। যেখানে আদর-আহ্লাদে পরম সুখে সময়গুলো কেটেছে। সে সময়কার স্মৃতি কবির জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আলোচ্য কবিতায়ও কবি শৈশবের স্মৃতিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। দেশ থেকে বহুদূরে থাকলেও তিনি তাঁর ছোটোবেলার সময়গুলো ভুলে থাকতে পারেন না। কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি তাঁকে বারবার আনমনা করে । হারানো স্মৃতি স্মরণ করার দিক থেকে উদ্দীপক-১ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাকে একই সূত্রে গ্রথিত করে
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি শৈশবস্মৃতিচারণ করেছেন। উদ্দীপকেও স্মৃতিকাতরতার এই বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
ঘ) উদ্দীপকের স্তবক-২ ও ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কপোতাক্ষ নদকে ঘিরে কবির স্মৃতিকাতরতার মাধ্যমে কবির স্বদেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ নদ কবির শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত। তাই সুদূর প্রবাসজীবনে থেকেও কৰি তাঁর প্রিয় নদকে ভুলতে পারেননি । এ নদের স্মৃতি তাঁকে প্রতিনিয়ত কাতর করে তুলেছে।
উদ্দীপকের স্তবক ১-এ ও স্বদেশপ্রেমের অত্যুজ্জ্বল প্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপকের কবির কাছে নিজের দেশের চেয়ে সুন্দর আর কোনো দেশ নেই। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কবির স্বদেশ। কবি তাঁর দেশকে রানির মতো মনে করেন।
উদ্দীপকের স্তবক-২ এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার স্বদেশকে নিয়ে ব্যক্তিমানুষের যে আবেগ-ভালোবাসা তা প্রকাশ পেয়েছে। জন্মভূমির স্থান সবকিছুর ঊর্ধ্বে। স্বদেশের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না। উভয় কবিই স্বদেশের রূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তাঁদের মুগ্ধতা ও স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপকের স্তবক- ২-এ এবং আলোচ্য কবিতায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের স্তবক-২ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূল চেতনাকে ধারণ করেছে।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ এবং উদ্দীপকের দ্বিতীয় স্তবক উভয়ক্ষেত্রেই মাতৃভূমির প্রতি গভীর অনুরাগ ও মমত্ববোধ প্রকাশিত হয়েছে।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-৮
উদ্দীপক:- আবেদীন সাহেব উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেও স্বদেশে কোনো ভালো চাকরি জোগাড় করতে না পেরে সুদূর আমেরিকায় চলে যান। সেখানে তিনি ভালো বেতনে একটি চাকরি পেলেও কোনোভাবেই মন বসাতে পারছেন না। তাঁর শুধু মনে পড়ে স্বদেশের কথা, দেশের মানুষের কথা এবং দেশের রূপ-বৈচিত্র্যের কথা।
ক. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকারতার আবরণে কী প্রকাশিত হয়েছে?
খ. কবি স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীর প্রতি কীভাবে প্রকাশ করেছেন?
গ. উদ্দীপকের আবেদীন সাহেবের প্রবাসে মন না বসা ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কোন দিকটি ইঙ্গিত করে তা ব্যাখ্যা করো
ঘ. “উদ্দীপকের ভাবস্তুতে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার সমগ্র দিক প্রতিফলিত হয়নি” – মন্তব্যটির সত্যতা নির্ণয় করো।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে।
খ) কপোতাক্ষ নদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে কবি স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীর প্রতি প্রকাশ করেছেন । মাইকেল মধুসূদন দত্তের শৈশবের দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছে নিসর্গ লালিত কপোতাক্ষ নদের তীরে। কপোতাক্ষ নদ মাতৃস্নেহে তার তৃষ্ণা মিটিয়েছে। কপোতাক্ষ নদের তীরে কাটানো শৈশব স্মৃতিকে স্মরণ করেই স্বদেশের জন্য কবি হৃদয়ের কাতরতা ও ভাবাবেগ প্রকাশিত হয়। কপোতাক্ষ নদ যেন স্বদেশের প্রতি তাঁর হৃদয়ের যে কাতরতা তা বঙ্গবাসীর নিকট ব্যক্ত করে, কবি সে প্রত্যাশাও করেন।
উত্তরের সারবস্তু: কপোতাক্ষ নদের প্রতি কবির দুর্বার আকর্ষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবাসীর প্রতি তার কাতরতা প্রকাশিত হয়েছে।
গ) উদ্দীপকের আবেদীন সাহেবের প্রবাসে মন না বসা ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির স্মৃতিকাতর দেশপ্রেমী মানসিকতার দিকটি ইঙ্গিত করে । মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। ফ্রান্সে বসবাসরত অবস্থায় জন্মভূমির শৈশব-কৈশোরের বেদনাবিধুর স্মৃতি তাঁর মনে জাগিয়েছে কাতরতা। আলোচ্য কবিতায় কপোতাক্ষ নদের প্রতি স্মৃতিকাতরতা প্রকাশের মাধ্যমে কবির স্বদেশপ্রেম ও গভীর ভাবাবেগ প্রকাশিত হয়।
উদ্দীপকের আবেদীন সাহেব ভালো চাকরির প্রত্যাশায় আমেরিকায় পাড়ি জমান। কিন্তু তিনি সেখানে গিয়ে মন বসাতে পারেননি। প্রবাসে গিয়ে বারবার তাঁর মনে পড়ে দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা, স্বদেশের রূপ, সৌন্দর্যের কথা। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের আবেদীন সাহেবের প্রবাসে মন বসে না স্মৃতিকাতরতা ও দেশপ্রেমী মানসিকতার জন্য, যা ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়ও ফুটে উঠেছে।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি এবং উদ্দীপকের আবেদীন সাহেব উভয়ই প্রবাসে অবস্থান করেছেন। কিন্তু মাতৃভূমির প্রতি তারা প্রগাঢ় মমত্ববোধ ও আকর্ষণ অনুভব করেছেন।
ঘ) উদ্দীপকের ভাববস্তুতে শুধু স্বদেশের প্রতি স্মৃতিকাতরতা ফুটে উঠলেও কবিতার বিষয়বস্তুতে আরও নানান দিক ফুটে ওঠায় উদ্দীপকে ‘কপোতাক্ষ ‘নদ’ কবিতার সমগ্র দিক প্রতিফলিত হয়নি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে আশ্রয় করে মাতৃভূমির প্রতি তাঁর ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন । শৈশবে কপোতাক্ষের নৈসর্গিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা কবির সাথে এই নদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। কবিকে স্নেহডোরে আঁকড়ে ধরা এই নদকে ঘিরে যেমন কবির স্মৃতিভাবনা প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি দেশের প্রতি তাঁর তীব্র ভাবাবেগ প্রকাশিত হয়েছে।
উদ্দীপকের আবেদীন সাহেব প্রবাসে বসে দেশ ও তার অনুষঙ্গ নিয়ে চিন্তা করে স্মৃতিকাতর হয়েছেন । তাঁর মনে পড়ে স্বদেশ ও তার মানুষের কথা, দেশের রূপ-বৈচিত্র্যের কথা, যা ভেবে তিনি প্রবাসে মন বসাতে পারেন না।
উল্লিখিত আলোচনায় দেখা যায়, উদ্দীপকে শুধু আবেদিন সাহেবের স্মৃতিকাতরতাই ফুটে উঠেছে। কিন্তু কবিতায় স্মৃতিকাতরতার সঙ্গে সন্নিবেশিত হয়েছে কবির গভীর দেশপ্রেম ও ভাবাবেগ যা সামগ্রিকভাবে উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই দেখা যায়, উদ্দীপকের ভাববস্তুতে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার সমগ্ৰ দিক প্রতিফলিত হয়নি।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের শৈশবস্মৃতি, কপোতাক্ষ নদের প্রতি তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি ছাড়াও অন্যান্য দিক প্রকাশিত হয়েছে । কিন্তু উদ্দীপকে কেবল স্বদেশের প্রতি স্মৃতিকাতরতার বিষয়টিরই প্রকাশ ঘটেছে।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-৯
উদ্দীপক:- তাওসীফ চৌধুরী পেশায় ডাক্তার। ডাক্তারি পাশ করে প্রথমেই তিনি নিজ গ্রামে নিয়োগ পেয়ে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেন। অতুলনীয় মেধা আর সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে বিনা ফি-তে কিংবা নামমাত্র ফি-তে চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সকলের প্রিয় মানুষে পরিণত হন তিনি। পেশাগত উৎকর্ষের জন্য গত বছর তিনি আমেরিকায় গেলেও নিজ দেশের কথা, গরিব অসহায় রোগীদের কথা ভুলতে পারেন না ডা. তাওসীফ চৌধুরী। অন্যদিকে তাঁরই বন্ধু ইশমাম চৌধুরী পড়াশোনা শেষ করে সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছেন। তিনি অনেক বিত্তবৈভবের মালিক । এতদ্সত্ত্বেও দেশে ফেরা কিংবা এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা চিন্তাও করেন না তিনি ।
ক. অষ্টক কী?
খ. ‘লইছে যে নাম তব বঙ্গের সংগীতে’—চরণটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ডা. তাওসীফ চৌধুরীর মধ্যে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় বর্ণিত কোন বিশেষ দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের ইশমাম চৌধুরীর মধ্যে ‘কপোতাক্ষ নদ” কবিতার কবির চেতনা অনুপস্থিত”—উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) অষ্টক হলো চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম আট চরণ যাতে মূলত ভাবের প্রবর্তনা থাকে।
খ) কবি প্রবাসজীবনেও তাঁর গানে, কবিতায় শৈশব স্মৃতিবিজড়িত নদীর গুণগান গেয়েছেন।
কপোতাক্ষ নদ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের হৃদয়ের সবটুকু স্থান দখল করে আছে। ফলে দূর প্রবাসে বসেও তিনি কপোতাক্ষ নদকে ভুলতে পারেননি । তাই প্রবাসজীবনেও তাঁর গান ও কবিতায় শৈশব স্মৃতিবিজড়িত নদীর নামই নিয়েছেন। আর একথা বোঝাতেই কবি বলেছেন, “লইছে যে নাম তব বঙ্গের সংগীতে”।
উত্তরের সারবস্তু: মাতৃভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধ থেকে কবি কপোতাক্ষ নদের গুণগান করেছেন।
গ) উদ্দীপকের ডা. তাওসীফ চৌধুরীর মধ্যে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় বর্ণিত কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেমের দিকটি ফুটে উঠেছে । ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের গভীর দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে। তিনি প্রবাসে বসেও তাঁর শৈশব স্মৃতিবিজড়িত নদের কথা ভুলতে পারেননি। জন্মভূমির শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি কবির মনে জাগিয়েছে কাতরতা। তাই কবি বিদেশে বসে কপোতাক্ষ নদকে স্নেহাদরে স্মরণ করেছেন । কবির এরূপ স্মৃতিকাতরতার অন্তরালে মূলত তাঁর গভীর দেশপ্রেম প্রকট হয়ে উঠেছে কবিতায়।
উদ্দীপকে ডা. তাওসীফ চৌধুরীর মধ্যে গভীর দেশপ্রেমের প্রকাশ লক্ষণীয় । তিনি ডাক্তারি পাশ করে নিজের এলাকার মানুষের সেবা করেছেন নিঃস্বার্থভাবে পেশাগত উৎকর্ষের জন্য আমেরিকায় গেলেও নিজ দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা ভুলতে পারেন না। মূলত দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণেই ডা. তাওসীফ বিদেশে থেকেও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন। এই স্মৃতিকাতরতার আবরণে ডা. তাওসীফের দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপকে । আর ডা. তাওসীফের এই চেতনা আলোচ্য কবিতার কবির দেশপ্রেমের চেতনার দিকটিকেই প্রতিফলিত করেছে ।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিকাতরতা ও দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপকের ডা. তাওসীফ চৌধুরীর মাঝেও এই বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়।
ঘ) ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির গভীর দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে, যা উদ্দীপকের ইশমাম চৌধুরীর মধ্যে অনুপস্থিত। আলোচ্য কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের গভীর দেশপ্রেমের প্রকাশ লক্ষণীয়। কবি দেশকে হৃদয়ের গভীরে অনুভব করেন। তাইতো বিদেশে বসেও শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা ভুলতে পারেননি। জন্মভূমির বেদনাবিধুর স্মৃতি কবির মনে জাগিয়েছে কাতরতা। ফলে কবি তাঁর জন্মভূমিকে স্নেহাদরে স্মরণ করেন । জন্মভূমিও যেন কবির এই হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীর নিকট ব্যক্ত করে কবি সেই প্রত্যাশা করেছেন ।
উদ্দীপকের ইশমাম চৌধুরীর মধ্যে দেশাত্মবোধের অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। তিনি পড়াশোনা শেষ করে সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করেন। প্রচুর বিত্তবৈভবের মালিক হলেও তিনি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করেন না। কেননা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তার কোনো মাথাব্যথা নেই । তিনি নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকেই প্রধান করে দেখেছেন। আর এজন্যই বিদেশে নিজের স্থায়ী আবাস গড়ে নিয়েছেন ।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির গভীর দেশাত্মবোধ প্রকাশ পেলেও উদ্দীপকের ইশমামের মধ্যে তা দেখা যায় না। কবি প্রবাসে বসে দেশের জন্য স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেও উদ্দীপকের ইশমাম তা হননি। কবি দেশের জন্য ব্যাকুল হলেও উদ্দীপকের ইশমাম বিদেশে নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত । তার মধ্যে কখনো দেশের জন্য ব্যাকুলতা দেখা যায় না। সার্বিক বিচারে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ইশমাম চৌধুরীর মধ্যে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির চেতনা অনুপস্থিত।
উত্তরের সারবস্তু: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় দূর প্রবাসে অবস্থানকালে মাতৃভূমির প্রতি কবির প্রবল আকর্ষণের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। উদ্দীপকের ইশমাম চৌধুরীর মাঝে এর সম্পূর্ণ বিপরীত ভাব পরিলক্ষিত হয়।
আরো পড়ুন: কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা~কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-১০
উদ্দীপক:-
উদ্দীপক-১ : মুছে যাওয়া দিনগুলো আমায় যে পিছু ডাকে
স্মৃতি যেন আমার হৃদয়ে বেদনার রঙে রঙে ছবি আঁকে
উদ্দীপক-২: ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা,
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
ক) সব সময় কবির কার কথা মনে পড়ে?
খ. আর কি হে হবে দেখা?’— কবির এরূপ মনে হওয়ার কারণ কী?
গ. উদ্দীপক-১ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কোন দিকটিকে ধারণ করে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. “উদ্দীপক-২ ও ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলসুর এক।”— মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো ।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ১০নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) সব সময় কবির কপোতাক্ষ নদের কথা মনে পড়ে।
খ) সৃজনশীল রচনামূলক প্রশ্ন নং ৭-খ দেখো ।
গ) সৃজনশীল রচনামূলক প্রশ্ন নং ৯-গ দেখো ।
ঘ) উদ্দীপক-২ এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে ।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে কপোতাক্ষ নদকে ঘিরে কবির স্মৃতিকাতরতার মাধ্যমে। এ নদ কবির শৈশব- কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত। তাই সুদূর প্রবাসজীবনে কবি ভুলতে পারেননি তাঁর প্রিয় নদকে। এ নদের স্মৃতি তাঁকে প্রতিনিয়ত কাতর করে তুলেছে। উদ্দীপকেও স্বদেশপ্রেমের অত্যুজ্জ্বল প্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপকের কবির কাছে নিজের দেশের চেয়ে সুন্দর আর কোনো দেশকেই মনে হয় না । অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কবির স্বদেশ। স্মৃতি দিয়েই কবির এ চিরসৌন্দর্যের দেশ গড়া।
উদ্দীপকে এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় স্বদেশকে নিয়ে ব্যক্তিমানুষের যে আবেগ-ভালোবাসা, তা প্রকাশ পেয়েছে। জন্মভূমির স্থান সকল কিছুর উর্ধ্বে। স্বদেশের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। উভয় কৰি স্বদেশপ্রেমে নিমগ্ন। স্বদেশকে হৃদয়ের সিংহাসনে বসিয়ে তার জন্য যে ব্যাকুলতা, যে আর্তি, তা ফুটে উঠেছে উদ্দীপক-২ ও আলোচ্য কবিতার মূলভাবে। এ যেন স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। তাই এ কথা সন্দেহাতীত যে, উদ্দীপক-২ ও ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলসুর এক।
উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপক-২ এবং কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় দেশাত্মবোধের প্রকাশ ঘটায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়ে উঠেছে।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নং-১১
উদ্দীপক:- জীবন জীবিকার তাগিদে রুমান সিঙ্গাপুরে গেলেও তার মন পড়ে থাকে ব্রহ্মপুত্রের তীরের সেই ছায়া ঘেরা গ্রাম চরহাজীপুরে। নদীর দুই তীরের প্রাকৃতিক শোভা, খেলার মাঠ, শৈশবের সুন্দর বন্ধুবান্ধবের কথা মনে পড়লেই তার চোখে জল আসে, আবেগ তাড়িত হয়ে ছুটে আসতে চায় আবার নিজ দেশের মাটিতে।
ক. বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবর্তন করেন কে?
খ. দুগ্ধ স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি স্তনে’ – বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে রুমানের সাথে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. উদ্দীপকের ভাব যেন ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলভাব উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো ।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ১১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক) বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবর্তন করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
খ) সৃজনশীল রচনামূলক প্রশ্ন নং ৯-খ দেখো ।
গ) উদ্দীপকের রুমানের মাঝে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির স্মৃতিকাতর দেশপ্রেমী মানসিকতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। যখন তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন, তখন জন্মভূমির শৈশব-কৈশোরের বেদনা-বিধুর স্মৃতি তাঁর মনে জাগিয়েছে কাতরতা। দূরে বসেও তিনি কপোতাক্ষ নদের মায়া ভুলতে পারেননি। কত দেশে কত নদনদী কবি দেখেছেন, কিন্তু জন্মভূমির এই নদ যেন মায়ের স্নেহডোরে তাঁকে বেঁধেছিল ।
তাই কবির মনে সন্দেহ জাগে, আর এই নদের দেখা তিনি পাবেন কিনা ।
উদ্দীপকের রুমান জীবিকার তাগিদে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমায়। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত চরহাজীপুর গ্রামে। যে গ্রামে ব্রহ্মপুত্রের তীরে তার শৈশব কেটেছে। আজ প্রবাসে গিয়ে বারবার তার দেশের কথা মনে পড়েছে, আপনজনদের কথা ভেবে সে আবেগে আপ্লুত হয়েছে। তাই বলা যায়, স্মৃতিকাতর দেশপ্রেমী মানসিকতার দিকটি উদ্দীপক এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই ফুটে উঠেছে।
উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকের রুমানের মধ্যে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির স্মৃতিকাতর দেশপ্রেমী মানসিকতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ) স্মৃতিকাতরতার অন্তরালে প্রবল দেশপ্রেম প্রকাশিত হওয়ায় উদ্দীপকের ভাব যেন ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার যথার্থ মূলভাব। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি মধুসূদন দত্ত স্মৃতিকাতরতার মধ্য দিয়ে তাঁর দেশপ্রেমী মানসিকতাকেই প্রকাশ করেছেন। শৈশবে মধুসূদন দত্ত কপোতাক্ষ নদের তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাই ফ্রান্সে বসবাসকালেও তিনি মাতৃভূমির বেদনা-বিধুর স্মৃতি ভুলতে পারেননি। দূরে বসেও তিনি যেন কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি শুনতে পান ।
কপোতাক্ষ নদের কাছে তাঁর সবিনয় মিনতি— বন্ধু ভাবে তাকে তিনি স্নেহাদরে যেমন স্মরণ করেন, কপোতাক্ষও যেন তাকে স্মরণ করে এবং বঙ্গবাসীদের কাছে কবির হৃদয়ের কাতরতা পৌছে দেয় । উদ্দীপকের রুমান ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে চরহাজীপুর গ্রামে বড় হয়েছেন। এখন জীবিকার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে এক মুহূর্তের জন্যও নিজের গ্রামকে ভুলতে পারেনি । ব্রহ্মপুত্র নদ, নদের দুই তীরের সৌন্দর্য, খেলার মাঠ, বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়গুলো মনে পড়লেই সে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে। তার বারবার দেশে ছুটে যেতে ইচ্ছা করে। যেমনটি আমরা আলোচ্য কবিতার কবির মাঝে লক্ষ করি।
উদ্দীপকের রুমান বিদেশে গিয়ে যেমন নিজের দেশের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছে সেই বিষয়টি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মধ্য দিয়ে কবির মানসিকতায়ও লক্ষ করা যায়। কবিও ভিন্ন দেশে গিয়ে শৈশব-কৈশোরের বেদনা-ি না-বিধুর স্মৃতিভারে কাতর হয়েছিলেন এবং রুমানের মধ্যে স্মৃতিকাতরতা সুস্পষ্ট। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ভাব যেন আলোচ্য কবিতার মূলভাবকেই নির্দেশ করে।
উত্তরের সারবস্তু: স্মৃতিকাতরতার অন্তরালে প্রবল দেশপ্রেম প্রকাশিত হওয়ায় উদ্দীপকের ভাব যেন ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার যথার্থ মূলভাব
আরো পড়ুনঃ সনেট কাকে বলে~সনেটের বৈশিষ্ট্যসমূহ
(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)