প্রশ্নঃ ‘আত্ম-বিলাপ কবিতায় কবির মর্মবেদনা কী? অথবা, মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘আত্ম-বিলাপ’ কবিতা অবলম্বনে কবির মর্মবেদনার স্বরূপ সংক্ষেপে।
উত্তরঃ ‘আত্ম-বিলাপ’ কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বেদনাজর্জরিত হাহাকারের স্বরূপ উন্মােচন করেছেন। অর্থ, যশ আর খ্যাতির প্রত্যাশায় তিনি সারা জীবন ছুটে বেড়িয়েছেন। জাত, ধর্ম, দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি ত্যাগ করে বিজাতীয় উন্নত সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা করতে গিয়ে কবি ব্যর্থ হয়েছেন।
আত্মবিলাপ কবিতার কবির মর্মবেদনা স্বরূপঃ আশার পিছনে কালক্ষেপণ করে কবি যে করুণ জীবন-অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন ‘আত্মবিলাপ’ কবিতায় তারই প্রকাশ ঘটেছে। আশার ছলনায় ভুলে কবি জীবনের অমূল্য সময় ব্যয় করেছেন। যখন তিনি জীবনের এ ফাকিটুকু বুঝতে পেরেছেন তখনই প্রশ্ন তুলেছেন-আশার ছলনে ভুলে তিনি বাস্তবে কি ফল লাভ করেছেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন। যে, জীবনের প্রধান উপকরণ যে যৌবন তাওতাে ফুরিয়ে যাচ্ছে । মুক্তার লােভে ডুবুরি অতল জলে ডুব দিতে দিতে মহামূল্যবান আয়ু ফুরিয়ে ফেলে কিন্তু মুক্তা পায় না।
আজ কবির অবস্থাও তাই। কি আশায় বাঁধি খেলাঘর, বেদনার বালুচরে’- কথাটি আধুনিককালের হলেও শতাধিক বছর পূর্বে মহাকবি মধুসূদন নিজের জীবন পরিক্রমায় এ কথার মর্ম হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছিলেন। বস্তুত আশায় বুক বেঁধেই মানুষ বেঁচে থাকে। হতাশায় যখন মানুষের দেহ-মন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তখন আশাই তাকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে। আশা জুলন্ত প্রেরণা শক্তি হয়ে কর্মের পথে মানুষকে ধাবিত করে। আশার পিছনে পিছনে ছুটে ছুটে কর্মোদ্যমী মানুষ জীবনের সাফল্যকে ছিনিয়ে আনতে চায়।
কিন্তু আশা যখন মরীচিকার মতাে লুপ্ত হয়ে পড়ে তখন জীবনে নেমে আসে গভীর দুঃখবােধ ও হতাশা। কিন্তু আশা তবুও মানুষের পিছু ছাড়ে না। বিস্তৃত জীবন থেকে যৌবন ফুরিয়ে এলেও ভ্রান্তি তবু দূর হয় না। কেবল না পাওয়ার বেদনায় ভারাক্রান্ত মন তখন আপসােস করে বলে ওঠে-
“নারিলি হরিতে মণি
দংশিল কেবল ফণী
এ বিষম বিষজ্বালা ভুলিবি মন কেমনে?”
আত্মবিলাপ কবিতার কবির সার্বিক মতামতঃ ভালাে কিছু লাভের আশায় জীবন বিপন্ন করেও কবি ব্যর্থমনােরথ হয়ে এ মর্মবেদনার জ্বালায় জ্বলে মরেছেন। এ বেদনা তাঁকে অহর্নিশি তাড়িয়ে ফিরেছে-এর থেকে মুক্তি মেলেনি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের।
আরো পড়ুন: ফটোশপ টুলস পরিচিতি
(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)